ভাষা-আন্দোলন বাঙলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছে। মাতৃভাষায় কথা বলার দাবিতে এই আন্দোলনের মূল সূত্রপাত হয়েছিল। এ আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ছিলো বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের মুখের ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টি এবং সাংস্কৃতিক বিকাশের আন্দোলন। এর জন্য ক্ষয় হয়েছে অনেক তাজা প্রাণ আর ঝরে গেছে রক্ত। মাতৃভাষার মুক্তির জন্য রক্ত দেওয়ার ইতিহাস পৃথিবীতে আর একটিও নেই। বাঙালিরাই একমাত্র জাতি, যারা ভাষার জন্য অকাতরে প্রাণ দিয়ে এক কালজয়ী ইতিহাস গড়েছে।
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান সৃষ্টির অল্পকাল পর থেকেই ভাষা আন্দোলনের সূচনা ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের একটি অংশের উদ্যোগে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২ সেপ্টম্বর, ‘তমুদ্দুন মজলিস’ নামিয় একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিলো বাঙলা ভাষার মাধ্যমে সংস্কৃতি চর্চা। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বাঙলা ভাষার পক্ষে এই সংগঠনের ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় উর্দুকেই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা দিলেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’
এই ঘোষণার পর ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়। সর্বদলীয় কর্মপরিষদের সিদ্ধান্ত অনুসারে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমবেত হয়ে এক বিরাট সভার আয়োজন করে। এই সভায় একুশে ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। অবস্থা বুঝতে পেরে ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ দিনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। তবুও ক্ষুব্ধ জনতা মিছিল ও গণশ্লোগান দিতে দিতে রাজপথে বেরিয়ে আসেন। পুলিশ তাদের ওপর গুলি বর্ষণ করে। শহিদ হন সালাম, জব্বার , রফিক, বরকতসহ নাম না জানা আরো অনেকে। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে যে ভাষা আন্দোলনের সূচনা ঘটে তারই চূড়ান্ত পরিণতি আসে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখে। এই তারিখটিকে স্মরণ করে সৃষ্টি হয়েছে অনেক সাহিত্য আর ইতিহাস। রচিত হয়েছে কবিতা, গান, গল্প, প্রবন্ধ, নাটক,উপন্যাস, ও ছড়া।
কবিতা বাঙলা সাহিত্যের প্রাচীনতম শাখা। কবিতা দিয়েই বাঙলা সাহিত্যের জন্ম হয়েছে। তেমনিভাবে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২১ শে ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে কবি মাহবুব-উল আলম চৌধুরী রচনা করেন একুশের প্রথম কবিতা, ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’।
“এখানে যারা প্রাণ দিয়েছে
রমনার ঊর্ধ্বমুখী কৃষ্ণচূড়ার তলায়
সেখানে দাঁড়িয়ে আমি কাঁদতে আসিনি
আজ আমি শোক বিহ্বল নই
আজ আমি প্রতিজ্ঞায় অবিচল
----------------------
আমি আজ তাদের ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি
যারা আমার অসংখ্য ভাইবোনকে নির্বিচারে হত্যা করেছে”।
এরপর স্মরণযোগ্য পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কর্তৃক একুশের প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে ফেলার পর কবি আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ কবিতার প্রতিবাদ স্বরূপ সোচ্চার বাণীঃ
“স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু, আমারা এখনো
চার কোটি পরিবার
খাড়া রয়েছি তো। যে ভিত কখনো কো